Netaji Subhas Chandra -images from past
রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ঢাকাবাসীর মুক্তি দূত হিসেবে নেতাজি সেদিন যেভাবে পূর্ববঙ্গে এসেছিলেন জেমস বন্ড চরিত্র তখন সৃষ্টি হলে নিঃসন্দেহে নেতাজির পা ছুঁয়ে প্রণাম করে হলিউডে নাম লেখাতেন।
১৯৩১ সালের অক্টোবরে ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর এলজি ডুর্নোকে গুলি করে হত্যা করে পলাতক হলেন বিপ্লবী সরোজ গুহ ও রমেণ ভৌমিক।পুলিশ এই দুজন বিপ্লবীকে ধরতে যখন ব্যর্থ হলো তখন সমস্ত আক্রোশ গিয়ে পড়ল ঢাকাবাসীর ওপর।ব্রিটিশ প্রশাসন এবং পুলিশের নির্মম অত্যাচারে অসহায় ঢাকাবাসী।বিপ্লবীদের সন্ধানে ঢাকা শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের তল্লাশির নামে লুটপাট ভাংচুর এমনকি শিশু থেকে বৃদ্ধ পুলিশের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি।এমতাবস্থায় খবর পেয়ে ছুটে এলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সতর্ক করলেন ঢাকা শহরে না ঢুকতে।কিন্তু বিদেশি শাসকদের এই রক্তচক্ষুকে পাত্তা দেয়ার অভ্যাস নেতাজির রক্তে নেই। স্টিমারযোগে নারায়ণগঞ্জ নামতেই গ্রেফতার করা হলো এবং কিছু সময় আটকে রেখে নেতাজিকে পরবর্তীতে একখানা স্টিমারে কুমিল্লার চাঁদপুর প্রেরণ করা হয়।’ কিন্তু নেতাজি ঢাকা পৌঁছানোর ব্যাপারে অনড়। চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা হয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু লোকচক্ষুর অন্তরালে রাতের বেলা ট্রেনে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও ময়মনসিংহের ভৈরব হয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা করেন। কিন্তু এবারও তাকে যেতে দেয়া হলো না।কিন্তু নেতাজি তাঁর সিদ্ধান্তেই অনড় যেভাবেই হোক ঢাকায় ঢুকতেই হবে ৭ নভেম্বর ১৯৩১ ঢাকা হইতে ৪ মাইল দূরবর্তী তেজগাঁও রেল স্টেশনে নেতজি সুভাষচন্দ্র বসু গ্রেপ্তার হলেন।
মহাকুমা হাকিম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে আবারও ফিরিয়া যাইতে বলেন। কিন্তু তিনি আবারও অসম্মত হন। তাঁহাকে তখন শর্তবদ্ধভাবে জামীন দিতে চাওয়া হয়, এবং জেলা ত্যাগ করিয়া পুনরায় মামলার শুনানীর দিন আসিতে বলা হয়। সুভাষবাবু এই শর্তে জামীন লইতে সম্মত হন না—তখন তাঁহাকে মোটর যোগে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়।’ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে এই প্রথম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পদার্পণ।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নেতাজি ঢাকা নগরীর অনেক এলাকাতেই গিয়েছিলেন এবং ১৯৩১ সালের ২৮শে অক্টোবর তারিখে পুলিস যে সব বাড়িতে হানা দিয়াছিল, তাহার প্রায় সমস্তগুলিই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি প্রত্যেক বাড়ির লোকজনদের সহিত আলাপ করেন এবং যেসব জিনিসপত্রের ক্ষতি সাধন করা হইয়াছে তাহাও পরিদর্শন করেন।নেতাজি ঢাকা থেকে প্রথমে ময়মনসিংহ সেখান থেকে নেত্রকোনা এবং তারপর একে একে কিশোরগঞ্জ, জামালপুর,যমুনা তীরবর্তী জেলা সিরাজগঞ্জ সফর করেন।এরপর ১৯৩৮ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আবার ঢাকায় এসেছিলেন। তখন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। ১৯৩৬ সালের কিছু পরে ঢাকা পৌরসভা লক্ষ্মীবাজার এবং বাংলাবাজারের কিছু অংশ নিয়ে এর নামকরণ করে সুভাষ বোস এভিনিউ।
Comments
Post a Comment